সুন্দরবনে হ্যামিলটন, রবীন্দ্রনাথ ও ডাক্তার বাবু। ✍️ উমা শঙ্কর মন্ডল

16th May 2020 4:24 am রাজ্য
সুন্দরবনে হ্যামিলটন, রবীন্দ্রনাথ ও ডাক্তার বাবু।  ✍️ উমা শঙ্কর মন্ডল


ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার স্রোত দিয়ে তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের অংশ হল সুন্দরবন। পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার স্রোতের একেবারে শেষ প্রান্তে সুন্দরবন অবস্থিত। অসংখ্যা খাল, বিল, ছোট নদী এই গোটা অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে। এটি পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় ও লোভনীয় স্থান, যার বহু অঞ্চলেই এখনও মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়েনি। পৃথিবীর মধ্যে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের সব চেয়ে বড় আবাসস্থলও এই সুন্দরবন। সুন্দরী গাছে ভরা এই জঙ্গলের বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখেই সুন্দরবনের নামকরণ করা হয়েছে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে জায়গা করে নিয়েছে সুন্দরবন। শুধুমাত্র ভারতেই এটি প্রায় ৪২৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প ও জাতীয় উদ্যান। যদিও সুন্দবনের প্রায় ৬০ শতাংশ অঞ্চলই বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত।

ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রায় চার হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। মোট ১০২টি দ্বীপ রয়েছে সেখানে। এরমধ্যে ৫৪টি দ্বীপে মানুষের বাস। উত্তর ২৪ পরগনার ৬টি ব্লক ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৩টি ব্লক মিলিয়ে সরকারি হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বাস করেন সুন্দরবনে। 

১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের স্যার ডানিয়েল হ্যামিল্টন। দু’দশকের চেষ্টায় ভোল বদলে দিয়েছিলেন মাতলা নদী লাগোয়া বেশ ক’টি গ্রামের চেহারা। তাঁর ভূমি সংস্কার ও পঞ্চায়েতরাজের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মতো ব্যক্তিত্ব। কী ভাবে জলা-জঙ্গলের মাঝে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ওই কর্মকাণ্ড চলছে, তা বুঝতে গাঁধী তাঁর আপ্ত সহায়ক মহাদেব দেশাইকে পাঠিয়েছিলেন গোসাবায় হ্যামিল্টনের আবাসে।
১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের স্যার ডানিয়েল হ্যামিল্টন। দু’দশকের চেষ্টায় ভোল বদলে দিয়েছিলেন মাতলা নদী লাগোয়া বেশ ক’টি গ্রামের চেহারা। তাঁর ভূমি সংস্কার ও পঞ্চায়েতরাজের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন #রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মতো ব্যক্তিত্ব। কী ভাবে জলা-জঙ্গলের মাঝে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ওই কর্মকাণ্ড চলছে, তা বুঝতে গাঁধী তাঁর আপ্ত সহায়ক মহাদেব দেশাইকে পাঠিয়েছিলেন গোসাবায় হ্যামিল্টনের আবাসে।প্রসঙ্গতঃ দীর্ঘকাল অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হ্যামিল্টনের সে-ই দু’টি বাংলোয় এখন আমজনতার ঢোকা নিষেধ। 

১৯০৩-এ সুন্দরবনের গোসাবায় প্রায় ৯ হাজার একর জমি কেনেন হ্যামিল্টন। সেখানে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ব্যাঙ্ক, চালকল, গ্রামীণ পুনর্গঠন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১ টাকার নোট চালু করেন গোসাবায়। পরে স্কটল্যান্ডে ফিরে যান। লেখক অমিতাভ ঘোষ তাঁর ‘হাংরি টাইড’ উপন্যাসে লিখেছেন হ্যামিল্টনের এই কীর্তি। প্রায় এক কিলোমিটার ব্যবধানে যে দুই বাংলোয় হ্যামিল্টন, তাঁর পরিবারের সদস্য ও অতিথিরা থাকতেন, সে দু’টির নাম‘বেকন বাংলো’, ‘হ্যামিল্টন বাংলো’। দু’টিতে তালা ঝুলছে। সাম্প্রতিক  উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকায় ‘বেকন বাংলো’-র চত্বরে বসানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথের বিরাট মূর্তি।  মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য শেষমেশ যাননি এই দুই বাংলোয়। দু’টি বাংলোই মাটি থেকে ফুট চারেক উঁচুতে। মূল কাঠামো মায়ানমার থেকে আনা সেগুন কাঠের। দু’টিরই মূল দরজার সামনে বড় করে লেখা, রবীন্দ্রনাথ ১৯৩২-এর ডিসেম্বর মাসে এখানে কাটিয়েছেন। ‘বেকন বাংলো’-র ভিতরে কিছু নেই। আগাম বিশেষ অনুমতি নিয়ে হ্যামিল্টন বাংলোয় গিয়ে দেখা গেল, চারটি সমান মাপের ঘরে তিনটি বড় খাট, চেয়ার-টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, জলের ফিল্টার, পেল্লায় ট্রাঙ্ক ছাড়াও রয়েছে হ্যামিল্টনের আবক্ষ মূর্তি। নানা অবস্থায় তোলা তাঁর একাধিক বাঁধানো ফটোর পাশে রয়েছে স্ত্রী লেডি মেরি এলিজাবেথের ফটো। হ্যামিল্টন ভারত থেকে চলে যাওয়ার পরে ১৯৬৯ পর্যন্ত তাঁর ভাইপো জেমস ছিলেন তদারকির ও ট্রাস্টের প্রধান। কেয়ারটেকার সুধাংশু রায় জানান, জেমস ও তাঁর স্ত্রী-র নামেই সুন্দরবনে চিহ্ণিত হয়েছে জেমসপুর, অ্যানিপুরের মতো জায়গা। 
সমবায়ের মাধ্যমে এলাকার অর্থনীতির চেহারাটাই বদলে দিয়েছিলেন এক ভিন্-দেশি। স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিল্টনের হাত ধরে এগিয়েছিল গোসাবা। ‘গোসাবার রূপকার’ বলে পরিচিত হ্যামিল্টন কৃষি, তাঁতের মতো নানা ক্ষেত্রে সমবায় প্রথায় জুড়ে দিয়েছিলেন এলাকার মানুষকে।
১৯০৩ সালে স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হ্যামিল্টন সাহেব গোসাবা ও রাঙাবেলিয়া দ্বীপে ১৪৩ ও ১৪৯ লটে প্রায় ৯০ হাজার বিঘা জমি চল্লিশ বছরের জন্য ইজারায় নেন। তখন উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের অন্তর্গত ছিল গোসাবা ও রাঙাবেলিয়া। ম্যানগ্রোভে ঘেরা এলাকায় হ্যামিল্টনের হাত ধরেই উন্নয়নের স্রোত বইতে শুরু করে।
১৯০৩-১৯০৭ সালের মধ্যে জঙ্গল সাফ করে জনবসতি তৈরির কাজে গতি আসে গোসাবায়, যার উদ্যোক্তা ছিলেন হ্যামিল্টন। ১৯০৯ সালে সাতজেলিয়া দ্বীপে আরও ৪০ হাজার বিঘা জমি চল্লিশ বছরের জন্য ইজারায় নেওয়া হয়।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই এলাকায় উন্নয়নের বহু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সাহেবের উদ্যোগে। স্কটল্যান্ড থেকে মিহি উল এনে গোসাবার তাঁতে বুনে হাল্কা ওজনের (২০০ গ্রাম) উন্নত মানের শাল তৈরি করা হতো। সে যুগের সম্ভ্রান্ত বহু মানুষ গোসাবায় তৈরি শালের কদর করতেন।
কৃষকদের নিয়ে একটি বড় উদ্যোগ ছিল ‘ধর্মগোলা’। ধান কাটার সময় ধর্মগোলায় কৃষকেরা ধান জমা দিতেন। সাহেবও নিজের জমির ধান জমা রাখতেন। আশ্বিন-কার্তিক মাসে যখন প্রয়োজন দেখা দিত, তখন সেই জমা রাখা ধান চাষিরা পেতেন। কে, কত ধান নেবেন, চাষিরা তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করতেন।

দরিদ্র চাষিদের আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণের কথাও ভেবেছিলেন হ্যামিল্টন।  গবাদিপশু পালন, মাছ চাষ, ফল ও সব্জির বাগান তৈরি, তাঁত চালানো, কাঠের কাজ ও বিভিন্ন কুটিরশিল্পের প্রসারে তিনি উদ্যোগী হন। ১৯০৯-১৯১১ সালের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার জন্য অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি হয়। প্রতিটি স্কুলের ঘরবাড়ি নির্মাণ, পুকুর খনন ও বাগান তৈরির জন্য ৬-৮ বিঘা জমি দেওয়া হয়। ১৯০৮ সালে গোসাবায় প্রতি সপ্তাহে শনিবার এক দিন হাট চালু করা হয়। এখনও নিয়মিত বসে সেই হাট। ১৯৩২ সালে সমবায় ব্যাঙ্ক চালু করা হয়। সাহেব তাঁর এলাকার জন্য ১ টাকার নোট চালু করেছিলেন। তিনি কৃষি গবেষণাগারও তৈরি করেন। গোসাবার ধান্য গবেষণাগার থেকে উৎপন্ন ২৩ নম্বর পাটনাই ধান বিভিন্ন এলাকায় সুনাম অর্জন করেছিল। কৃষকদের উংসাহিত করার জন্য ১৯২৮ সালে গোসাবায় কৃষি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় ‘রাইস রিসার্চ কনফারেন্স’-এ ব্রিটিশ সরকারের অনুরোধে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসাবে হ্যামিল্টন গোসাবার ফার্ম থেকে উৎপাদিত ২৩ নম্বর পাটনাই ধানের কথা বিস্তারিত ভাবে বলেন। জানা যায়, হ্যামিল্টন সাহেবের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩২ সালের ২৯ ডিসেম্বর (মতান্তরে ৩০ ডিসেম্বর) গোসাবার কর্মযজ্ঞ দেখতে এসেছিলেন। সাহেবের আতিথেয়তায় তিনি দু’দিন বেকন বাংলোতে ছিলেন।

১৯১৬ সালে কৃষি সমবায় সমিতি, ১৯২২ সালে ‘ধান্য বিক্রয় সমবায় সমিতি’ স্থাপন করা হয়। সে সময়ে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রার যামিনীভূষণ মিত্র গোসাবার সমবায় আন্দোলনে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় ১৯২৭ সালে ‘যামিনী রাইস মিল’ গড়া হয়।

১৯৩২ সালে ‘গোসাবা রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ইন্সটিটিউশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩২ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি জাঁকজমক সহকারে লেডি মার্গারেট হ্যামিল্টন ওই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পাশ্চাত্যের প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাচ্যে এমন বিশাল কর্মকাণ্ড প্রাচীন গোসাবার চেহারা বদলে দিয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল বহুমুখী। নানা বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিল। যার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে-বিদেশেও। হ্যামিল্টন সে যুগে গ্রামোন্নয়নের জন্যে নানা ভাবে চেষ্টা করেছিলেন।

গোসাবার বাংলোগুলির মর্যাদা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা গোপীনাথ বর্মন। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই গোপীনাথ বর্মন কে। 

"মানুষ নিজ কর্ম গুনে জড়ত্ব থেকে মনুষ্যত্ব এ, এবং মনুষ্যত্ব থেকে দেবত্বে উপনীত হতে পারে।"--স্বামী বিবেকানন্দ। 
সুন্দরবন এর গোসাবা এরূপ একজন  ডাক্তার বাবু কে পেয়েছিলেন যিনি  মানুষের কাছে  ভগবান স্বরূপ ছিলেন। মানবদরদী  স্যার  ড্যানিয়েল হ্যামিলটন  সাহেবের  যথার্থ উত্তরসূরি ডাক্তারবাবু। যিনি  শহর বাসী হয়েও,এখনকার N.R.S. Medical College &Hospital (Cambel Medical College) থেকে কৃতিত্ব এর সাথে ডাক্তারি পাশ করে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে চাকরি করলেও, হ্যামিলটন সাহেবের Fear God, Work hard, be  honest এই উপদেশ কে পাথেয় করে,গোসাবা তথা সুন্দরবন এর আর্ত, পীড়িত, দরিদ্র মানুষের সেবা  করার  জন্য  শহরের বৈভব ত্যাগ করে, সকল  বাধা উপেক্ষা করে স্বাধীনতা এর বছর, 1947সালে সহধর্মিণী মানুরানী বর্মন কে সঙ্গে নিয়ে  চলে  আসলেন গোসাবা তে। প্রথম  চিকিত্সা পরিষেবা দেওয়া এর মাধ্যমে  শুরু  হল তাঁর  কর্ম চাঞ্চল্য। গোসাবা দ্বীপ ছাড়াও পাশাপাশি দ্বীপ গুলি  এমনকি বাসন্তী, সন্দেশ খালি, হিঙ্গলগঞ্জ থেকে  রুগীরা আসত।শনিবার  হলে  দূরদূরান্ত থেকে  নৌকা, লঞ্চ,দোলায় আসা রুগীর লাইন  পড়ত। উনি ধৈর্য হারাতেন না।আধুনিক চিকিত্সা সরঞ্জাম না থাকা সত্বেও, assistant  দের  সাহায্যএ, স্টেথো,blood pressure মাপার যন্ত্র, অপারেশন ছুরিকাঁচি  নিয়ে কখনো ভাঙ্গা হাড় জোড়া  ,প্রসব করানো, ছোট ছোট অপারেশন, টিটেনাস, স্ট্রোক,বাঘের  কামড়ে ক্ষতবিক্ষত রুগীর 
চিকিৎসা করতেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। চারিদিকে কুসংস্কার, গাছ গাছড়া জড়িবুটি, অশিক্ষা, দারিদ্র্য এর মাঝখানে  একমাত্র  প্রশিক্ষিত ডাক্তার বাবু এর চিকিত্সা পরিষেবায়
এই অঞ্চল এর ভগবান রূপে পরিগণিত হলেন।এখানকার  অনেক  মানুষ দের কে ব্যক্তি গত ভাবে চিনতেন,রোগের ধরনধারন বুঝতেন। রাত 1-2-বাঘে আক্রান্ত রোগীদের  সুস্থ ও বাঁচিয়ে তুলতে  আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। তাই  তিনি  বাঘের ডাক্তার  বলেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। 
সকাল আটটা পর্যন্ত  Hamilton Trustee এর হিসাব নিকাশ, তারপর চিকিত্সা পরিষেবা, রাতে অফিসিয়াল কাজ কর্ম  সারতেন। কাজ ফেলে  রাখতেন না। দূরদূরান্ত এ দুর্গম এলাকায় চিকিত্সা করতে ও চলে যেতেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর free of cost চিকিত্সা করতেন। 
গোসাবা  হাই স্কুলে এর তিনি দীর্ঘ 32বছরের   সম্পাদক থেকেছেন,বিদ্যালয় এর রূপকার। বিদ্যালয় এ ILA--কোর্স এর Hygiene বিষয়টি পড়াতেন। দুস্থ ছাত্রছাত্রী দের জন্য মানুরানী চ্যারিটেবল ট্রাস্টি এর পক্ষ থেকে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার ব্যবস্থা এবং দুজন ছাত্রছাত্রী কে মেধা বৃত্তি প্রদান এর ব্যবস্থা করেন। 
Hamilton Trustee এর সমবায় মুলক আদর্শ কে জনপ্রিয় করার জন্য পত্রপত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং সমবায় আদর্শ কে ছাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। পাশাপাশি মাননীয় তুষার কান্তি কাঞ্জিলাল মহাশয় এর পরিচালনাধীন Tagore Society  For Rural Development অধীন রাঙ্গাবেলিয়া স্বাস্থ্য প্রকল্প এর Medical Director ছিলেন। এস্টেটের মাধ্যমে নৈশ বিদ্যালয়, নারশারী স্কুল স্থাপন এ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। State Bank এর Gosaba Branch, গোসাবা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মৎস জীবিদের সমিতি প্রতিষ্ঠা,গোসাবা গ্যসিফায়ার প্রতিষ্ঠা এর বিষয় এ তিনি প্রধান ভূমিকা নেন।পরবর্তী প্রজন্ম এর কাছে সমবায় এর সুফল, হ্যামিলটন সাহেবের সমবায় কর্মধারা, গোসাবা এর গুরুত্ব ও ঐতিহ্য তিনি উজ্জ্বল ভাবে তুলে ধরতেন। 
তিনি আসলেন, জনগণের সেবা করলেন, জনগণের কাছে  ভগবান হয়ে উঠলেন। তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক, সৎ,বুদ্ধি মান,বিচক্ষণ, নিষ্কলঙ্ক মানুষ যা আজকের দিনে বিরল।তিনি এই অঞ্চল এর মানুষ এর চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।





Others News

"ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া" নিজের হাতে তৈরি করেছেন আস্ত এক অরণ্য!

"ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া" নিজের হাতে তৈরি করেছেন আস্ত এক  অরণ্য!


বঙ্গবার্ত ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধ করে একা একটা আস্ত অরণ্য উপহার দেওয়া কী আর মুখের কথা! লেগেছিল চল্লিশটা বছর। দৃঢ় সংকল্পের এই কাহিনী জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকগুলো বছর আগে। কীভাবে সাধারণ এক গোয়ালা পরিবারের ছেলে যাদব হয়ে উঠলেন বাস্তবের ‘অরণ্যদেব’, সেই গল্পই জানা যাক আজ।
১৯৬৫ সাল। অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভাসছিল ছোট্ট একটি দ্বীপ অরুণা সাপোরি। কিন্তু ভূমিধ্বসের কারণে ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল ব্রহ্মপুত্র। ভয়ে সেই দ্বীপ ছেড়ে ১২ কিলোমিটার দূরে মাজুলি দ্বীপে চলে যায় বহু পরিবার। চলে যায় যাদব পায়েংও। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ১৯৭৮ সালে জন্মস্থানে ফিরল যাদব পায়েং। কারণ বাবা মা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে হতো তাকেই। ইচ্ছে ছিল, পড়াশোনা ছেড়ে গ্রামের পারিবারিক দুধের ব্যবসা দেখবে সে। কিন্তু ফিরে যা দেখল সে, তা ছিল দুঃস্বপ্নের মতোই। সবুজের লেশমাত্র নেই দ্বীপে। বনজঙ্গল সাফ করে দিয়েছে মানুষের লোভ আর ব্রহ্মপুত্রের খামখেয়ালি গতিপথ। ধূ ধূ মরুভূমির মতো দ্বীপজুড়ে মরে পড়ে আছে কয়েক হাজার সাপ। গ্রামে ফিরে গ্রামবাসীদের কাছে সাপ ও দ্বীপের করুণ অবস্থার কথা বলে ১৬ বছরের কিশোর যাদব। এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী তার হাতে তুলে দেন কিছু চারাগাছ। বলেন, “গাছ লাগাও বাবা। তাহলে শুধু সাপ কেন, আমরা সবাই বাঁচব।” সেই থেকে শুরু যাদব পায়েংয়ের অরণ্য অভিযান।বৃদ্ধের দেওয়া গাছের চারাগুলি প্রথমে সে তার খামারের পাশেই বসায়। যাতে রোজ জল দেওয়া যায়। তারপর বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জোগাড় করে হাজার হাজার বীজ। আগামী ৪০ বছর এপ্রিল থেকে জুন, এই তিনমাস ধরে চলতে থাকে তার সবুজ বিপ্লব। নিজের হাতে লাগানো গাছ থেকে ডাল কেটে সেই ডাল নিয়ে নদী পেরিয়ে নদীর চারপাশে সেই ডাল বসানোও ছিল তার রোজনামচা। যার ফলস্বরূপ ৫৫০ হেক্টর বা ১৩৬০ একর জুড়ে গড়ে ওঠে যাদব পায়েংয়ের অরণ্য, যা কিনা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের থেকেও বড়ো। ধীরে ধীরে এই অরণ্যে বাড়তে থাকে বাঘ, হরিণ, হাতি, গন্ডারদের আনাগোনা। স্থানীয় মানুষ সেই জঙ্গলের নাম দেয় ‘মোলাই কাঠনিবাড়ি’। ২০১২ সালে প্রকৃতির প্রতি তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্য জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘Forest man of India’ শিরোপা দেয়। ওই বছরই ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী মুম্বইয়ে যাদব পায়েংকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করেন। ২০১৫ সালে পান পদ্মশ্রী পুরস্কার। তবে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সমস্ত অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন বনসৃজনের জন্য।
যেখানে আগে ধূ ধূ করত বালির চর, সেখানে এখন অবস্থান করছে বাঁশ, বহেরা, সেগুন, কাস্টার্ড আপেল, গুলমোহর, তেঁতুল, তুঁত, কাঁঠাল, কুল, জাম গাছের এক ঘন জঙ্গল। আর এর কারিগর একমাত্র ‘মোলাই’। হ্যাঁ, স্থানীয় মানুষদের কাছে এই নামেই পরিচিত যাদব। এত বছর পরেও থেমে থাকেননি।এখনও সময় পেলেই নিজের হাতে লাগান গাছ। সযত্নে বড়ো করে তোলেন। পাশাপাশি এক বন্ধুর সঙ্গে বৃক্ষরোপণের কৌশল নিয়ে বই লেখায় মনোনিবেশ করেছেন তিনি। উদ্দেশ্য, ছোটোদের ছোটো থেকেই গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করা। ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য, অদম্য সাহস ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনোকিছুই অসম্ভব নয় যাদব পায়েং তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।


বাদাবন বাঁচাতে লড়ছেন ম্যানগ্রোভ ম্যান
*******************************************
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে ১০ বছর ধরে লড়াই করছেন এক ভূগোলের শিক্ষক। নদীর জলে ভেসে আসা ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহ করে লক্ষাধিক চারাগাছ তৈরি করেছেন উমাশঙ্কর মণ্ডল। সেই ম্যানগ্রোভ আম্ফানের তাণ্ডব থেকে অনেক গ্রামকে বাঁচিয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। ঘর-বাড়ি হারিয়ে আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। সেই সব দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছেন সুন্দরবনের ওই 'ম্যানগ্রোভ ম্যান'। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অসংখ্য অচেনা মানুষ।
গোসাবার সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরির বাসিন্দা উমাশঙ্কর বড় হয়েছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার ঠিক পাশেই তাঁর বাড়ি। কর্মসূত্রে থাকেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে। সেখানকার একটি স্কুলে ভূগোলের শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্ত্রীও স্কুলের শিক্ষিকা। বাইরে থাকলেও গ্রামকে ভোলেননি। সুন্দরবনের বাসিন্দা ও ভূগোলের ছাত্র হিসেবে বুঝেছিলেন, বাদাবনের মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভই। এ রাজ্যে যত ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে তার প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। টাকার লোভে সেই ম্যানগ্রোভ চুরি করছে চোরাকারবারিরা। ম্যানগ্রোভ কমে যাওয়ায় অরক্ষিত হয়ে পড়ছে সুন্দরবনের বহু জনপদ। আয়লায় প্রথম সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঝড়ের হাত থেকে সুন্দরবনের মানুষকে বাঁচাতে নিজের উদ্যোগে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কাজ শুরু করেন। তাতে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও সামিল হয়। এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।
উমাশঙ্কর বলেন, 'আয়লার পর চরঘেরির আশপাশে বাইন, গরান প্রভৃতি ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কাজ শুরু করি। নদীতে অনেক ম্যানগ্রোভের বীজ ভেসে আসে। গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে সেটা সংগ্রহ করা হয়। তারপর নদীর পাশে পুঁতে দেওয়া হয়। তা থেকেই ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি হয়। এ ভাবে গত ১০ বছরে প্রায় ছ'লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা তৈরি করেছি।'
উমাশঙ্কর জানান, গ্রামের লোকজন ছাড়াও এখন অনেক স্কুলের পড়ুয়াও ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এর জন্য অর্থ সাহায্য করছেন। আয়লার সময় ম্যানগ্রোভ ছিল না। তাই বাঁধ ভেঙে গ্রামে নোনা জল ঢুকে গিয়েছিল। আম্ফানের গতিবেগ বেশি হলেও ম্যানগ্রোভ থাকায় ততটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ম্যানগ্রোভ ছিল বলেই বাঁধটা হয়তো রক্ষা পেয়েছে।
ম্যানগ্রোভ রক্ষার লড়াইয়ের পাশাপাশি আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ক্রাউড ফান্ডিং করেছেন উমাশঙ্কর। খোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। কেউ পোশাক সংগ্রহ করছেন। কেউ আবার নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন।
বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'আমি অনেক বার পড়ুয়াদের নিয়ে চরঘেরি গিয়েছি। নিজের হাতে ম্যানগ্রোভের চারা পুঁতেছি। আম্ফানে ওখানকার অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ওঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উমাশঙ্কর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমি যতটা পারছি সাহায্য করছি।' টালিগঞ্জের নৃপেন্দ্রনাথ স্কুলের ভূগোলের শিক্ষিকা সায়ন্তনী দাস বসু বলেন, 'উমাশঙ্কর অনেক বছর ধরেই ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর কাজ করছে। আমার স্কুলের মেয়েদেরও সেটা দেখিয়ে এনেছি। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য আমার মতো অনেকেই এগিয়ে আসছে।' তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী, শ্যামবাজারে বাসিন্দা দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, 'সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রক্ষার পাশাপাশি উমাশঙ্করের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুন্দরবনের গরিব ছেলেমেয়েদের জন্যে  বই, খাতা দিয়ে সাহায্য করি আমরা। পাশাপাশি পোশাক সংগ্রহ করেও পাঠাই আমরা।'

তথ্যসূত্রঃ- এই সময়