মমতার ‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্পের কামাল – ৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক পেলেন ৫০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য

16th May 2020 4:13 pm রাজ্য
মমতার ‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্পের কামাল – ৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক পেলেন ৫০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য


নিজস্ব প্রতিনিধি: 

 

রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিতে প্রথম থেকেই ‘লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। করোনা মোকাবিলায় বাজারে গিয়ে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বোঝানো থেকে শুরু করে লকডাউনের মধ্যে রাজ্যের কেউ যাতে অভুক্ত না থাকে, সেজন্য রেশনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান সবটাই দায়িত্ব নিয়ে করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি মমতার ‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্পে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা রাজ্যের প্রায় পাঁচ লক্ষ শ্রমিককে এখনও পর্যন্ত সহায়তা বাবদ ৫০
 কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য।

অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা বাংলার মানুষদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য ১০০টির বেশি ট্রেনের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের টুইটারে এই ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পরপর দুটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘দেশের নানা প্রান্তে আটকে থাকা রাজ্যের নাগরিকদের ফেরানোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা ১০৫টি অতিরিক্ত স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি।’
এই প্রকল্পে এক হাজার টাকা করে সহায়তা পেতে জমা পড়া সাড়ে ন’লক্ষ আবেদনকারীর আবেদন পরীক্ষা করে প্রায় পাঁচ লক্ষ শ্রমিকের ব্যাঙ্ক একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে বলে অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। আবার লকডাউনের জেরে কাজ হারানো রাজ্যের অসংগঠিত শ্রমিকদের সহায়তার জন্যে প্রচেষ্টা প্রকল্পে ১০ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। এই প্রকল্পে গতকাল ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন।





Others News

"ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া" নিজের হাতে তৈরি করেছেন আস্ত এক অরণ্য!

"ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া" নিজের হাতে তৈরি করেছেন আস্ত এক  অরণ্য!


বঙ্গবার্ত ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধ করে একা একটা আস্ত অরণ্য উপহার দেওয়া কী আর মুখের কথা! লেগেছিল চল্লিশটা বছর। দৃঢ় সংকল্পের এই কাহিনী জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকগুলো বছর আগে। কীভাবে সাধারণ এক গোয়ালা পরিবারের ছেলে যাদব হয়ে উঠলেন বাস্তবের ‘অরণ্যদেব’, সেই গল্পই জানা যাক আজ।
১৯৬৫ সাল। অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভাসছিল ছোট্ট একটি দ্বীপ অরুণা সাপোরি। কিন্তু ভূমিধ্বসের কারণে ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল ব্রহ্মপুত্র। ভয়ে সেই দ্বীপ ছেড়ে ১২ কিলোমিটার দূরে মাজুলি দ্বীপে চলে যায় বহু পরিবার। চলে যায় যাদব পায়েংও। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ১৯৭৮ সালে জন্মস্থানে ফিরল যাদব পায়েং। কারণ বাবা মা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে হতো তাকেই। ইচ্ছে ছিল, পড়াশোনা ছেড়ে গ্রামের পারিবারিক দুধের ব্যবসা দেখবে সে। কিন্তু ফিরে যা দেখল সে, তা ছিল দুঃস্বপ্নের মতোই। সবুজের লেশমাত্র নেই দ্বীপে। বনজঙ্গল সাফ করে দিয়েছে মানুষের লোভ আর ব্রহ্মপুত্রের খামখেয়ালি গতিপথ। ধূ ধূ মরুভূমির মতো দ্বীপজুড়ে মরে পড়ে আছে কয়েক হাজার সাপ। গ্রামে ফিরে গ্রামবাসীদের কাছে সাপ ও দ্বীপের করুণ অবস্থার কথা বলে ১৬ বছরের কিশোর যাদব। এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী তার হাতে তুলে দেন কিছু চারাগাছ। বলেন, “গাছ লাগাও বাবা। তাহলে শুধু সাপ কেন, আমরা সবাই বাঁচব।” সেই থেকে শুরু যাদব পায়েংয়ের অরণ্য অভিযান।বৃদ্ধের দেওয়া গাছের চারাগুলি প্রথমে সে তার খামারের পাশেই বসায়। যাতে রোজ জল দেওয়া যায়। তারপর বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জোগাড় করে হাজার হাজার বীজ। আগামী ৪০ বছর এপ্রিল থেকে জুন, এই তিনমাস ধরে চলতে থাকে তার সবুজ বিপ্লব। নিজের হাতে লাগানো গাছ থেকে ডাল কেটে সেই ডাল নিয়ে নদী পেরিয়ে নদীর চারপাশে সেই ডাল বসানোও ছিল তার রোজনামচা। যার ফলস্বরূপ ৫৫০ হেক্টর বা ১৩৬০ একর জুড়ে গড়ে ওঠে যাদব পায়েংয়ের অরণ্য, যা কিনা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের থেকেও বড়ো। ধীরে ধীরে এই অরণ্যে বাড়তে থাকে বাঘ, হরিণ, হাতি, গন্ডারদের আনাগোনা। স্থানীয় মানুষ সেই জঙ্গলের নাম দেয় ‘মোলাই কাঠনিবাড়ি’। ২০১২ সালে প্রকৃতির প্রতি তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্য জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘Forest man of India’ শিরোপা দেয়। ওই বছরই ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী মুম্বইয়ে যাদব পায়েংকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করেন। ২০১৫ সালে পান পদ্মশ্রী পুরস্কার। তবে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সমস্ত অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন বনসৃজনের জন্য।
যেখানে আগে ধূ ধূ করত বালির চর, সেখানে এখন অবস্থান করছে বাঁশ, বহেরা, সেগুন, কাস্টার্ড আপেল, গুলমোহর, তেঁতুল, তুঁত, কাঁঠাল, কুল, জাম গাছের এক ঘন জঙ্গল। আর এর কারিগর একমাত্র ‘মোলাই’। হ্যাঁ, স্থানীয় মানুষদের কাছে এই নামেই পরিচিত যাদব। এত বছর পরেও থেমে থাকেননি।এখনও সময় পেলেই নিজের হাতে লাগান গাছ। সযত্নে বড়ো করে তোলেন। পাশাপাশি এক বন্ধুর সঙ্গে বৃক্ষরোপণের কৌশল নিয়ে বই লেখায় মনোনিবেশ করেছেন তিনি। উদ্দেশ্য, ছোটোদের ছোটো থেকেই গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করা। ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য, অদম্য সাহস ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনোকিছুই অসম্ভব নয় যাদব পায়েং তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।


বাদাবন বাঁচাতে লড়ছেন ম্যানগ্রোভ ম্যান
*******************************************
সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে ১০ বছর ধরে লড়াই করছেন এক ভূগোলের শিক্ষক। নদীর জলে ভেসে আসা ম্যানগ্রোভের বীজ সংগ্রহ করে লক্ষাধিক চারাগাছ তৈরি করেছেন উমাশঙ্কর মণ্ডল। সেই ম্যানগ্রোভ আম্ফানের তাণ্ডব থেকে অনেক গ্রামকে বাঁচিয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। ঘর-বাড়ি হারিয়ে আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। সেই সব দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছেন সুন্দরবনের ওই 'ম্যানগ্রোভ ম্যান'। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অসংখ্য অচেনা মানুষ।
গোসাবার সাতজেলিয়া দ্বীপের চরঘেরির বাসিন্দা উমাশঙ্কর বড় হয়েছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার ঠিক পাশেই তাঁর বাড়ি। কর্মসূত্রে থাকেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে। সেখানকার একটি স্কুলে ভূগোলের শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্ত্রীও স্কুলের শিক্ষিকা। বাইরে থাকলেও গ্রামকে ভোলেননি। সুন্দরবনের বাসিন্দা ও ভূগোলের ছাত্র হিসেবে বুঝেছিলেন, বাদাবনের মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভই। এ রাজ্যে যত ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে তার প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। টাকার লোভে সেই ম্যানগ্রোভ চুরি করছে চোরাকারবারিরা। ম্যানগ্রোভ কমে যাওয়ায় অরক্ষিত হয়ে পড়ছে সুন্দরবনের বহু জনপদ। আয়লায় প্রথম সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঝড়ের হাত থেকে সুন্দরবনের মানুষকে বাঁচাতে নিজের উদ্যোগে ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কাজ শুরু করেন। তাতে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও সামিল হয়। এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।
উমাশঙ্কর বলেন, 'আয়লার পর চরঘেরির আশপাশে বাইন, গরান প্রভৃতি ম্যানগ্রোভের চারা লাগানোর কাজ শুরু করি। নদীতে অনেক ম্যানগ্রোভের বীজ ভেসে আসে। গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে সেটা সংগ্রহ করা হয়। তারপর নদীর পাশে পুঁতে দেওয়া হয়। তা থেকেই ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি হয়। এ ভাবে গত ১০ বছরে প্রায় ছ'লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা তৈরি করেছি।'
উমাশঙ্কর জানান, গ্রামের লোকজন ছাড়াও এখন অনেক স্কুলের পড়ুয়াও ম্যানগ্রোভ লাগানোর কাজে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এর জন্য অর্থ সাহায্য করছেন। আয়লার সময় ম্যানগ্রোভ ছিল না। তাই বাঁধ ভেঙে গ্রামে নোনা জল ঢুকে গিয়েছিল। আম্ফানের গতিবেগ বেশি হলেও ম্যানগ্রোভ থাকায় ততটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ম্যানগ্রোভ ছিল বলেই বাঁধটা হয়তো রক্ষা পেয়েছে।
ম্যানগ্রোভ রক্ষার লড়াইয়ের পাশাপাশি আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ক্রাউড ফান্ডিং করেছেন উমাশঙ্কর। খোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। কেউ পোশাক সংগ্রহ করছেন। কেউ আবার নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করছেন।
বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'আমি অনেক বার পড়ুয়াদের নিয়ে চরঘেরি গিয়েছি। নিজের হাতে ম্যানগ্রোভের চারা পুঁতেছি। আম্ফানে ওখানকার অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ওঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উমাশঙ্কর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমি যতটা পারছি সাহায্য করছি।' টালিগঞ্জের নৃপেন্দ্রনাথ স্কুলের ভূগোলের শিক্ষিকা সায়ন্তনী দাস বসু বলেন, 'উমাশঙ্কর অনেক বছর ধরেই ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর কাজ করছে। আমার স্কুলের মেয়েদেরও সেটা দেখিয়ে এনেছি। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য আমার মতো অনেকেই এগিয়ে আসছে।' তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী, শ্যামবাজারে বাসিন্দা দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, 'সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রক্ষার পাশাপাশি উমাশঙ্করের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুন্দরবনের গরিব ছেলেমেয়েদের জন্যে  বই, খাতা দিয়ে সাহায্য করি আমরা। পাশাপাশি পোশাক সংগ্রহ করেও পাঠাই আমরা।'

তথ্যসূত্রঃ- এই সময়