"আত্ম নির্ভরশীল ও পরস্পর নির্ভরশীল"
✍️ মোয়াজ্জেম হোসেন
কথাটি যখন আসলো তাহলে আমাদের ইতিহাস পতাই দেখা যাক একটু ..... বিজ্ঞানের মতে 70 হাজার বছর আগে মানুষ সৃষ্টির পর মানুষ আরো আরো অন্যান্য জীবদের মত এমনকি জীবনযাত্রা, কর্ম,যৌন সহবাস এ তারাও ছিলো সাধারণ একটা প্রাণী মতো। তারপর হলো বুদ্ধি ভিত্তিক বিপ্লব (cognative revolution) তারপর আসলো কৃষি ভিত্তিক বিপ্লব (Agriculture revolution) যা প্রায় 12 হাজার বছর আগে এবং মানুষকে নতুন গতি দিল । সবশেষে প্রায় 5 হাজার বছর আগে আসলো বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ( Scientific Revolution) যা রাতারাতি পালটে দিয়েছে ইতিহাসের গতিপথ। হইতো বিজ্ঞানের এই বিপ্লব ইতিহাসের ইতি ও টেনে দিতে পারে।
70 হাজার বছর আগে সৃষ্টির পর আমরা সবার সমানই ছিলাম সব আত্ম নির্ভর, তখন না ছিলো ছিলো পোশাক, না বাড়িঘর, অনন্যা জীবদের মতো প্রথম দিকে লতাপাতা, গাছ খেয়ে জীবন যাপন চলতো তার পর আস্তে আস্তে মাংস, মাছ খাওয়া শিখল, তখন সমাজ বলে কিছুই ছিলো না, যাযাবরের জীবন যখন ছিল। এর পর পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিতে থাকলো, গোষ্ঠী জীবন গড়ে উঠতে লাগল। এর পর যখন খাদ্য অভাব দেখা দিতে লাগলো তখন মানুষ কৃষির আবিষ্কার করলো। কৃষি বিপ্লব থেকেই শুরু হলো খাদ্য জমানো প্রক্রিয়া ও কৃষি জমি দখল আর এই সময় থেকেই শুরু হয়ে গেল মানুষের মানুষের দ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও দখলের লড়াই।
ইতিহাসে পর্যন্ত সবই ঠিক ছিলো সবাই সমান আত্ম নির্ভর সব দিক থেকেই, গোষ্ঠী থেকে সমাজ তৈরি হলো আর এখান থেকেই আস্তে আস্তে শুরু হলো কর্মের ভাগ, নারী পুরুষের কর্মের ভাগ। নারীদের হালকা বাড়ির কাজে আস্তে আস্তে লাগাতে শুরু করলো পুরুষরা চাষবাস, শিল্পের ভারী কাজের দিকে যেতে লাগলো। আস্তে আস্তে রীতিনীতি গুলি সমাজের নিয়ন হয়ে দাঁড়াতে থাকলো। এর পর যখন ধর্ম আসলো রীতি নীতি গুলো আরো শক্ত হতে লাগল। এই ভাবেই তৈরি হয়ে গেলো সমাজের নিয়ম।
এপর্যন্ত অর্থনীতি কর্ম প্রধানত প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণী ছিলো, তৃতীয় শ্রেণীর তেমন ভাবে উন্নীত হয়নি। এই ভাবে নারীরা ঘরের কাজে লেগে গেলো তবে কি এর উদ্দেশ্য শুধু নারীদের দমিয়ে রাখার ছিলো ? উত্তর না , নারীদের সন্মানের উচ্চ স্তরের রাখার উদ্দশে এটা করা হয়ে ছিলো কিন্তু সেই উদ্দেশ্য কিছুটা পূর্ণ হলোও সফল হইনি। বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই ঊনিশ শতকের শুরুর দিকের সমাজে বিদ্যমান লৈঙ্গিক বৈষম্যের অবসান। নারীবাদী কর্মকাণ্ড সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীবাদ (Feminism) আসলো, যদিও সমস্ত অর্থনীতিক কর্ম স্তরে এখনও সবাই যেতে পারিনি প্রধানত তৃতীয় শ্রেণির অর্থনীতিক (টারশিয়ারি)কর্মে সাফল্য পেয়েছে।
সমাজের উন্নতি করতে করতে আত্মনর্ভরশীলতা পরিবর্তে পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে গেছি। তবে একটু আমাদের থেকে অন্নুনত সমাজের দিকে যদি যাই ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়া বা ট্রাইবাল গোষ্ঠীর দিকে তারা কিন্তু এখনও আত্ম নির্ভরশীল হয়ে আছে। নারী পুরুষ সকলেই তারা সমান ভাবে সব অর্থনীতিক স্তরে সমান ভাবে প্রায় কাজ করে।
এপ্রসঙ্গে আত্ম নির্ভরশীল (self dependent) এর সাথে পরস্পর নির্ভরশীল (inter-dependent) দুটি কথা উঠে আসে। আমাদের বর্তমান সমাজ হলো বেশির ভাগটাই পরস্পর নির্ভরশীল। এবার আমাদের কতটা আত্মনির্ভরশীল হাওয়া দরকার আর কতটা পরস্পর নির্ভরশীল হওয়া দরকার? আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলি কে আত্মনির্ভর করতে হবে যেমন স্বাধীনতা, খাদ্য, নিজের চলার অর্থনীতি বিশেষ করে ব্যাক্তি জীবন, আর এর উপরে সামাজিক জীবনে, সামাজিক বিকাশ, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক বিকাশের জন্য দরকার পরস্পর নির্ভরশীলতা। একটি দেশের মানুষ কখনোও শুধু আত্মনর্ভরশীলতায় চলবে পারে না। দেশে বা সমাজের জন্যে প্রয়োজন পরস্পর নির্ভরশীলতা। তাই আমাদের ব্যাক্তি জীবন আত্মনির্ভরশীল ও সামাজিক জীবন পরস্পর নির্ভরশীল হলেই উন্নতি ও পরিপূর্ণ হবে।